‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’

প্রকাশঃ মে ১৪, ২০২১ সময়ঃ ১:২০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২১ পূর্বাহ্ণ

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিলো হিজরি মাস রমজান। দেশের আকাশে দেখা দিয়েছে শাওয়াল মাসের চাঁদ। তাই আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মে) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

আগে রমজানের শেষে আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই জাতীয় কবির ঐ গানের সুরে আনন্দে দুলে উঠতো সবার মন। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও যেন সেই আনন্দের আবহ নেই। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মন খারাপের ছায়া ফেলেছে ঈদ আনন্দেও।

গত বছরের মতো করোনার প্রকোপে এবারও কেনাকাটা খুব বেশি হয়নি। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে মার্কেট-দোকানপাট খুলে দিলেও ক্রেতা সমাগম আগের মতো হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলায় জেলায় বাস চলাচল এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলার সুযোগ থাকলেও আন্তঃজেলা তথা দূরপাল্লার বাস, রেল ও লঞ্চের মতো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ মানুষ কর্মস্থলে থেকে গেছেন। ফলে এবার ঈদে নেই নতুন জামা কেনার সেই উচ্ছ্বাস, নেই প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ কাটানোর সেই আনন্দ।

তাছাড়া জাতীয় ঈদগাহ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দান, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠসহ অনেক বড় বড় ঈদগাহে এবার ঈদ জামাতের আয়োজন নেই। যেসব ঈদ জামাত আয়োজন হচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। মানা করা হয়েছে কোলাকুলি ও করমর্দন করতে। বারণ করা হয়েছে বাইরের খাবার-দাবার গ্রহণেও। এমনকি প্রতি ঈদে ঘরে ঘরে মানুষ ফিরনি-সেমাইয়ের দাওয়াত দেয়া-নেয়া করলেও এবার সেসবেও অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।

মন ভার হওয়ার এমন নানা কারণ থাকলেও সবাই আশাবাদী এই দুর্দিন কেটে যাবে বলে। বৃহস্পতিবার (১৩) মে সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করবো, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।…বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।

এসময় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়-মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এই কর্তব্য ভুলে না যাই।’

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, পূর্ণমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ মুসলমান জাতির প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিরাট নিয়ামত। এই উৎসবেই ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র সবাই ভালোবাসা-মমতার বাহুডোরে অনাবিল আনন্দ-উৎসবে মিলেমিশে যায়। নজরুলের ভাষায়, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

করোনার প্রকোপে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও দেশের মানুষ রোজা এবং রোজার আগ থেকেই পাশের দুস্থ-অসহায় মানুষটির দিকে চোখ রেখেছেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঈদেও সামর্থবানরা একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাশের অসহায় মানুষটির সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবেন বলে প্রত্যাশা সবার। যেমনটি বলে গেছেন জাতীয় কবি, “তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ…”।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G